🎮 গেমটা আগে থেকেই সাজানো: স্কুইড গেম, পুঁজিবাদ এবং মিথ্যা মুক্তির গল্প

স্কুইড গেম যেন একটি নির্মম প্রশ্ন করে আমাদের কাছে—
আমরা কীভাবে সহিংসতা ও নিপীড়ন মেনে নিই, যদি কেউ “নিজের ইচ্ছায়” তাতে অংশ নেয়?

এই ব্লগপোস্টে বিশ্লেষণ করা হয়েছে সাতটি দৃশ্য, যেখানে স্কুইড গেম-এর প্রতিটি খেলা বাস্তব জীবনের পুঁজিবাদী ফাঁদগুলোর প্রতিচ্ছবি।

পাশাপাশি হা-জুন চ্যাং-এর “২৩টি অজানা কথা” বইয়ের কিছু অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে—যা দেখায়, বাজার আসলে কখনোই মুক্ত নয়, এবং ‘পছন্দ’ অনেক সময়ই ছদ্মবেশী বাধ্যবাধকতা।

Read the English Version HERE.


“আপনি চুক্তিপত্রে সই করেছেন। আপনি ইচ্ছা করেই এখানে এসেছেন।”
— ফ্রন্টম্যান, Squid Game


🌍 একটি বৈশ্বিক ঘটনা, যা অনেকের জীবনের কথা বলে

২০২১ সালে Squid Game মুক্তি পাওয়ার পর, এটি মাত্র চার সপ্তাহেই ১১১ মিলিয়নেরও বেশি দর্শক অর্জন করে — তখনকার Netflix ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা শো। কিন্তু সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো:

এই শো টি এমন একটি গল্প বলে যেখানে ‘পছন্দ’ মানুষকে ধ্বংস করে — আর মানুষ তা দেখতেও চায়।

এই ভাবনাটা আমাকে নতুন করে ভাবিয়েছে, বিশেষ করে যখন আমি সিজন ৩ দেখতে শুরু করলাম।


🧠 আপনি ফ্রি চয়েস পাচ্ছেন… কেবল কষ্ট বেছে নিতে?

গল্পটা শুরু হয় এমনভাবে: খেলোয়াড়রা নিজের ইচ্ছায় খেলার জন্য সাইন করে। কেউ জোর করে না। নিয়ম জানা, সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব।

এটিই সেই মিথ্যা স্বাধীনতা — যার উপর আধুনিক পুঁজিবাদ দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু যদি সেই “পছন্দের” পেছনের পরিস্থিতিই আপনাকে বাধ্য করে? যদি বাজারটা আসলে এমন এক খেলা হয়, যেখানে নিয়মগুলো আগে থেকেই ঠিক করা — এবং কেবল কিছু মানুষের পক্ষে?

অর্থনীতিবিদ হা-জুন চ্যাং তার বই 23 Things They Don’t Tell You About Capitalism-এর প্রথম অধ্যায়েই বলেন:

“ফ্রি মার্কেট বলে কিছু নেই। প্রত্যেকটি বাজারই নিয়ন্ত্রিত।”


🎯 স্কুইড গেম-এর সাতটি দৃশ্য যা বাস্তব জীবনের অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি


১. 🧓 ইল-নাম: গেম ডিজাইনার কখনো খেলোয়াড় নয়

ইল-নামকে শুরুতে মনে হয় একজন বৃদ্ধ, দুর্বল খেলোয়াড়। কিন্তু শেষে জানা যায়, সে-ই গেমটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সে কখনোই ঝুঁকির মধ্যে ছিল না।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: পুঁজিবাদের বাস্তব জগতে, কর্পোরেট এলিটরা নিয়ম তৈরি করে — কিন্তু সেই নিয়ম তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।


২. 🚦 রেড লাইট, গ্রিন লাইট – “Fair” নিয়ম, মারাত্মক ফলাফল

এই গেমে নিয়ম পরিষ্কার। কিন্তু ফলাফল? গণহত্যা।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় নিয়ম থাকলেও নিরাপত্তা থাকে না। একটিমাত্র ভুল — এবং আপনি শেষ।

হা-জুন চ্যাং-এর Thing 16 অধ্যায় বলে:

“আমরা এতটা বুদ্ধিমান নই যে বাজারকে নিজের মতো চলতে দিতে পারি।”


৩. 🗳️ তারা ভোট দিয়ে গেম ছাড়ে… আবার ফিরে আসে

তাদের একটি “পছন্দ” দেওয়া হয়। তারা ছেড়ে যায়। কিন্তু তারপর একে একে সবাই ফিরে আসে — কারণ বাইরের জীবন আরও নিষ্ঠুর।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: মানুষ খারাপ চাকরিগুলো “পছন্দ” করে না। তারা বাধ্য হয়ে করে।

হা-জুন চ্যাং-এর Thing 7 অধ্যায় মনে করিয়ে দেয়:

“ফ্রি মার্কেট নীতিগুলি গরীব দেশগুলোকে ধনী করে না।”


৪. 🎲 মার্বেল খেলা – ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠে দুর্বলতা

খেলোয়াড়রা জোড়া বাঁধে ভেবে যে তারা একসাথে খেলবে। কিন্তু নিয়ম জানার পর বোঝে, একজনকে বাঁচাতে আরেকজনকে মরতে হবে।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: বাজারব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোও প্রতিযোগিতার শিকার হয়।


৫. 🤝 আলি ও সাং-উ – নীতিবানরা হারে, কৌশলীরা জেতে

আলি আন্তরিক, বিশ্বস্ত। সাং-উ তাকে প্রতারণা করে এবং সে মারা যায়।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: সৎ লোকেরা অনেক সময় পরাজিত হয় — কারণ তারা খেলার নিয়ম জানে না। যারা নিয়ম বদলাতে জানে, তারাই জেতে।


৬. 🎭 ভিআইপি দর্শকরা – দূরে বসে উপভোগ

ধনী ভিআইপিরা গেম দেখছে, বাজি ধরছে, হাসছে। তাদের জীবনে কোনো ঝুঁকি নেই।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: সবচেয়ে ধনী শ্রেণি দুর্দশাকে দূর থেকে দেখে। তারা মুনাফা করে — যুদ্ধে, সংকটে, মন্দায়।


৭. 🪟 গ্লাস ব্রিজ – আপনি কোথায় দাঁড়াচ্ছেন, সেটিই নির্ধারণ করে

এই গেমে শুরুতে যাদের নাম ডাকা হয়, তারা প্রায় নিশ্চিতভাবে মারা যায়। পিছনের লোকেরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে।

💡 বাস্তব প্রতিচ্ছবি: আপনি কতটা কঠোর পরিশ্রম করছেন তা নয়, আপনি কোথা থেকে শুরু করেছেন — সেটিই ভবিষ্যৎ ঠিক করে।


🧵 কেন আমরা ভোগান্তি মেনে নিই, যদি সেটি “নিজের পছন্দ” হয়?

আমার মনে হয়, পরিচালক আমাদের এমন এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছেন:

“আমরা কি কেবল এজন্যেই নিষ্ঠুরতাকে মেনে নিই — কারণ কেউ স্বেচ্ছায় সেটি বেছে নিয়েছে?”

  • গার্মেন্টস কর্মীরা ১২ ঘণ্টা কাজ করছে — “তারা তো চাকরি চায়।”
  • শিক্ষার্থী ঋণে ডুবে — “তারা নিজেরাই তো সাবজেক্ট বেছে নিয়েছে।”
  • গিগ ওয়ার্কার গাড়িতে ঘুমাচ্ছে — “এটাই তো স্বাধীনতা।”

এগুলো সত্যিকারের পছন্দ নয়। এগুলো গেম ডিজাইনারদের তৈরি করা ‘সিস্টেমেটিক বাধ্যবাধকতা’।


🎧 এখান থেকেই আমাদের কথোপকথন শুরু

এই কারণেই আমি এবং আমার বন্ধু শুরু করছি পডকাস্ট Between Lines and Lands — যেখানে আমরা বই পড়ে বিশ্লেষণ করব অর্থনীতি, সমাজ ও ক্ষমতার বাস্তব গল্পগুলো।

আমাদের প্রথম বই:
📘 23 Things They Don’t Tell You About Capitalism — হা-জুন চ্যাং রচিত।


✍️ শেষ কথা

স্কুইড গেম-এ সবাই চেয়েছিল। কিন্তু সবাই মরেছে।

কারণ পছন্দ থাকলেই মুক্তি আসে না — যদি সিস্টেমটাই হয় শোষণের জন্য তৈরি।

আমাদের বাস্তব জীবন কি খুব একটা আলাদা?


🧭 পরবর্তী ব্লগে

সিজন ২-এ আমরা দেখব, কীভাবে সত্য জেনেও মানুষ আবার ফিরে যায় — আবার খেলতে চায়।
কারণ তারা বিশ্বাস করে… তারা এবার জিতবে।

আর তাতেই মিথ্যেটা আরও শক্তিশালী হয়।


🎧 আমাদের সঙ্গে থাকুন:

🔗 Instagram: @linesandlands
🔗 YouTube: Between Lines and Lands
🔗 TikTok: @linesandlands

Share this insight: